সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ০২:৪১ পূর্বাহ্ন
বরিশাল বিশ্বিবিদ্যালয়ের ভিসির অপসারণের দাবীতে চলতি বছরের ২৬ মার্চ থেকে দীর্ঘ টানা ৩৫ দিনের আন্দোলন করেছে শিক্ষার্থীরা। এরপর ভিসি বিহীন সাড়ে ৫ টি মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে। মধ্যখানে কিছুসময় ট্রেজারারকে ভিসির রুটিন দায়িত্ব দেয়া হলেও গত ৭ অক্টোবর তার মেয়াদকালও শেষ হয়ে গেছে। সবমিলিয়ে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষা এবং ফল প্রকাশ আটকে গেছে। স্থবির হয়ে পড়েছে প্রশাসনিক এবং উন্নয়নমূলক কাজ। বাতিল করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা।
আর এসবকিছুর পর ভিসির অপসারনের দাবীতে আন্দোলন শেষ হওয়ার সাড়ে ৫ মাসের মাথায় দ্রুত সময়ের মধ্যে ভিসি নিয়োগের দাবিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নতুন করে আন্দোলনে নেমেছে।
বৃহষ্পতিবার (১৭ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে ভিসি, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সহ গুরুত্বপূর্ন পদগুলোতে দ্রুত সময়ের মধ্যে যোগ্য কর্মকর্তা নিয়োগের দাবী জানানো হয়েছে।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আলীম সালেহী, মহিউদ্দিন আহমেদ শিফাত, লোকমান হোসেন, ইকবাল মাহমুদ এবং রাজু গাজী সহ অন্যান্যরা।
বক্তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগ সৎ ও যোগ্য ভিসি নিয়োগের জন্য রাস্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবী জানান।
ভিসি তাড়িয়ে আবার কেন ভিসি নিয়োগের আন্দোলন জানতে চাইলে শিক্ষার্থীরা জানায়, তৎকালীন ভিসি ছিলো স্বৈরাচার। তার অনিয়ম-দুর্নীতি শিক্ষার্থীরা মুখ বুজে সহ্য করতে না পেরে অপসারনের দাবীতে আন্দোলন করা হয়েছিলো। কিন্তু দির্ঘ ৫ মাসেও নতুন ভিসি নিয়োগ না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একামেডিক, প্রশাসনিক এবং উন্নয়ন কার্যক্রম একেবারে স্থবির হয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে একজন সৎ এবং যোগ্য ব্যক্তিকে ভিসি নিয়োগের দাবী জানান তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার বাহাউদ্দিন গোলাপ জানান, দির্ঘদিন ধরে ভিসি না থাকায় অনেক গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত আটকে আছে। সিন্ডিকেট কমিটি এবং একাডেমিক কাউন্সিলের সভা হয় না দির্ঘদিন ধরে। এমনকি ১৭ ও ১৮ অক্টোবরের স্নাতক ১ম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। বিভিন্ন বিভাগের ফল প্রকাশ করা যাচ্ছে না। প্রশাসনিক কার্যক্রমও স্থবির হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় দ্রুত ভিসি নিয়োগ না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে দির্ঘ মেয়াদে অচলাবস্থার সৃস্টি হবে বলে আশংকা তার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসেব শাখার সহকারী পরিচালক মো. আতিকুর রহমান জানান, ভিসি না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চলতি মাসের বেতন প্রদান অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া সকল আর্থিক কার্যক্রম থমকে গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মুরশিদ আবেদীন বলেন, ভিসি না থাকার কারনে সকল উন্নয়ন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ঠিকাদারদের কোটি কোটি টাকার বিল আটকে গেছে। নতুন ভিসি নিয়োগ ছাড়া এই সংকট উত্তরনের কোন পথ নেই।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক আবু জাফর মিয়া বলেন, ভিসি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক। তিনি না থানায় সকল কর্মকান্ডে স্থবিরতা নেমে এসেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে একজন ভিসি নিয়োগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম সচল রাখার জন্য রাস্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবী জানান শিক্ষক নেতা আবু জাফর মিয়া।
এর আগে গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের একটি অনুষ্ঠানে করা মন্তব্যকে কেন্দ্র করে ১ মাসেরও বেশী সময় ধরে শিক্ষার্থী আন্দোলনের মুখে মেয়াদ শেষের আগেই দেড় মাসের ছুটিতে যেতে বাধ্য হন তৎকালীন ভিসি প্রফেস ড. এসএম ইমামুল হক। ছুটি কাটিয়ে গত ২৭ মে শেষ কার্যদিবস অতিবাহিত করেন তিনি। এরপর ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মাহবুব হাসান ভিসির রুটিন দায়িত্বে থাকলেও গত ৭ অক্টোবর তার ৪ বছরের মেয়াদ শেষ হয়। এর আগে থেকেই রেজিস্ট্রার এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের পদ শূন্য রয়েছে। ২০১২ সালে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর পর আজ পর্যন্ত উপ-উপাচার্য নিয়োগ হয়নি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে।